Table of Contents
হার্ট ব্লক কি
আপনার হৃদযন্ত্রের বৈদ্যুতিক সিস্টেমে সমস্যা থাকলে এটি একটি প্রধান হৃদরোগ। এটি আপনার হৃদস্পন্দনকে ধীর করে দেয় বা এমনকি স্পন্দন এড়িয়ে যেতে পারে, যার ফলে হৃৎপিণ্ড দ্বারা অপর্যাপ্ত রক্ত পাম্পিং হয়। এই অবস্থাটিকে এভি ব্লক, অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার ব্লক বা পরিবাহী ব্যাধিও বলা হয়।
হৃদয়ের একটি বিশেষ কোষ ব্যবস্থা রয়েছে যা এটিকে আরও ভালভাবে বোঝার জন্য বৈদ্যুতিক আবেগ তৈরি করে। তারপরে তারা নির্দিষ্ট গতিতে আপনার হৃদয় জুড়ে এই সংকেতগুলি বিতরণ করে।
সাধারণত, বৈদ্যুতিক সংকেত হৃদপিন্ডের উপরের চেম্বার বা অ্যাট্রিয়া থেকে নিচের চেম্বার বা ভেন্ট্রিকেলে যায়। অ্যাট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোড বা এভি নোড হল একটি সেল ক্লাস্টার যা হৃৎপিণ্ডের উপরের চেম্বার থেকে নীচের প্রকোষ্ঠে বৈদ্যুতিক কার্যকলাপকে সংযুক্ত করে।
যখনই একটি ব্লক ঘটে, বৈদ্যুতিক সংকেত AV নোডের মাধ্যমে ভেন্ট্রিকলগুলিতে সঠিকভাবে যেতে সক্ষম হয় না। এর ফলে হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন কমে যায় বা স্পন্দন এড়িয়ে যায়। সহজ কথায়, এর অর্থ হৃৎপিণ্ড স্বাভাবিক হার্টের মতো কাজ করে না।
হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণ
হৃৎপিণ্ডে বেশি পরিমাণে ব্লক থাকলে বুকে ব্যথা হয়। আস্তে আস্তে ব্যথা বাম হাতে ছড়িয়ে পড়ে। হাঁটার সময় ও সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার সময় বুকে ব্যথা হয়। থামলে ব্যথা কমে যায়। হার্ট ব্লক সনাক্ত করা কঠিন কারণ তাদের লক্ষণগুলি অন্যান্য বিভিন্ন রোগের সাথে বিভ্রান্ত হতে পারে। নিচের প্রথম দিকেরহার্টে ব্লকের লক্ষণ:
- মাথা ঘোরা বা হালকা মাথা ব্যথা
- ক্লান্তি
- বুকে ঝাঁকুনি বা ঝাঁকুনি
- ধড়ফড়
- নিঃশ্বাসের দুর্বলতা
- বুকে চাপ বা ব্যথা
- ব্যায়াম করতে অসুবিধা
অল্প বয়স থেকেই আপনার হার্টের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া সর্বদা ভাল এবং যুক্তিযুক্ত। যদিও সতর্কতা ছাড়াই গুরুতর অসামঞ্জস্য ঘটতে পারে, তবে আপনি আপনার হৃদয়কে শক্তিশালী রাখতে সর্বদা দ্রুত হাঁটা, দৌড়ানো, জগিং বা হালকা ব্যায়াম বেছে নিতে পারেন। এমন কি হৃদয়ের জন্য যোগব্যায়াম আপনার হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করতে বেশ কিছু প্রমাণিত সুবিধা প্রদান করে। এই একটি দ্বারা অনুষঙ্গী করা উচিত হৃদয় স্বাস্থ্যকর খাদ্য, কম চর্বি আপনি সুস্থ রাখতে.
হার্ট ব্লকেজের লক্ষণ
হার্ট ব্লকের সাধারণ লক্ষণগুলি হার্টে ব্লকেজের ধরণের উপর নির্ভর করে। যাইহোক, আপনি যদি এই লক্ষণগুলির মধ্যে কোনটি লক্ষ্য করেন তবে আপনার কখনই তাদের উপেক্ষা করা উচিত নয়।
হৃৎপিণ্ডে ব্লকেজের লক্ষণগুলি নিম্নরূপ:
ফার্স্ট-ডিগ্রি হার্ট ব্লকের লক্ষণ
- কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে।
- একটা রুটিন ইসিজি(ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাফ) হৃদস্পন্দন এবং হার্টের ছন্দ স্বাভাবিক থাকলেও এটি নিশ্চিত করে।
উপরোক্ত প্রকারগুলি কিশোর, ক্রীড়াবিদ, তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের এবং অত্যন্ত সক্রিয় ভ্যাগাস স্নায়ুতে সাধারণ।
সেকেন্ড-ডিগ্রি হার্ট ব্লকের লক্ষণ
- মাথা ঘুরছে
- মূর্ছা যাওয়া
- বুক ব্যাথা
- নিঃশ্বাসের দুর্বলতা
- ক্লান্ত বোধ করছি
- বমি বমি ভাব
- হৃদস্পন্দন
- দ্রুত শ্বাস – প্রশ্বাস
থার্ড-ডিগ্রি হার্ট ব্লকের লক্ষণ
- বুক ব্যাথা
- মূর্ছা যাওয়া
- মাথা ঘোরা
- ক্লান্ত বোধ করছি
- নিঃশ্বাসের দুর্বলতা
যখন একটি হার্ট ব্লক থার্ড-ডিগ্রি হয়ে যায়, তখন এটি তীব্র হয়ে ওঠে এবং হার্টের হার যথেষ্ট ধীর হয়ে যায়।
আপনি যদি এই উপসর্গগুলির মধ্যে কোনটি খুঁজে পান, তবে অবিলম্বে চিকিত্সার পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
হার্টের ব্লকের কারণ
হার্ট ব্লক বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে, কিছু জন্মগতভাবে বিদ্যমান এবং অন্যগুলি সময়ের সাথে সাথে হার্টে বিকাশ লাভ করে। যাইহোক, সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল একটি হৃদপিন্ডে হঠাৎ আক্রমণ. এখানে হার্ট ব্লকেজের বিভিন্ন কারণ রয়েছে যা আপনার জানা দরকার।
জন্মগত
জন্মগত হার্ট ব্লক জন্মগতভাবে ঘটে এবং একজন ব্যক্তি এটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। এটি তার গর্ভাবস্থায় মায়ের অবস্থার কারণে ঘটতে পারে, বা সন্তান এই অসুস্থতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে।
কার্ডিওমায়োপ্যাথি
কার্ডিওমায়োপ্যাথি একটি হৃদপিন্ডের পেশীর রোগ যা বংশগত হিসাবে অর্জিত বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হতে পারে। এই অবস্থা হার্টের পক্ষে শরীরে রক্ত সরবরাহ করা কঠিন করে তোলে, অবশেষে হার্ট ফেইলিউরের দিকে পরিচালিত করে।
হার্ট ভালভ রোগ
দ্য হার্ট ভালভ এছাড়াও রোগের শিকার হয়। হার্টের ভালভ গঠনে বার্ধক্যজনিত পরিবর্তন, হার্টের ভালভ সংক্রমণ, জন্মগত অক্ষমতা, হার্ট অ্যাটাক এবংকরোনারি ধমনীরোগ এই হার্ট ভালভ রোগ হতে পারে. এগুলি হৃৎপিণ্ডের অনুপযুক্ত কার্যকারিতার দিকে পরিচালিত করে।
হার্টের ক্ষতি
হার্টের ক্ষতির কারণে হার্ট ব্লকও হয়। এই ক্ষতিটি ওপেন হার্ট সার্জারি, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসার কারণে হতে পারে।
হার্টের তারের ক্ষতি
আমরা বড় হওয়ার সাথে সাথে ফাইব্রোসিসের বিকাশের কারণে হার্টের উপরের এবং নীচে সংযোগকারী তারগুলি ব্যর্থ হলে হার্ট ব্লক তৈরি হতে পারে। যে কোনো কারণ যা এই হৃদপিন্ডের তারের ক্ষতি করে তার ফলে হার্ট ব্লক হতে পারে। উচ্চ পটাসিয়াম মাত্রা বা অন্যান্য ইলেক্ট্রোলাইট অস্বাভাবিকতা এছাড়াও তারের ব্যর্থতা হতে পারে.Â
অন্যান্য হৃদরোগ
করোনারি ধমনী রোগ, হার্ট অ্যাটাক, সারকোইডোসিস, নিশ্চিত ক্যান্সার, অথবা কোনো হার্টের প্রদাহজনিত রোগ যেমন নির্দিষ্ট অটোইমিউন রোগ বা সংক্রমণও হার্ট ব্লকের কারণ।
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব
পর্যাপ্ত মাত্রায় ঘুম না হলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। শরীর যদি সঠিক পরিমাণে বিশ্রাম না পায়, তা হলে রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ ভালো মতো হয় না। ফলে স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ বেশি মাত্রায় হয়। হৃদরোগের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা
অফিসের কাজের চাপ, পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে অনেকেই চিন্তিত থাকে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি তো বাড়েই, সেসঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, বেশি খাওয়া, ঘুমের সমস্যা, মানসিক ক্লান্তি দেখা দেয়।
অলস জীবনযাপন
অলস জীবনযাপন করলে হার্ট ব্লক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই অলস সময় না কাটিতে নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।
ধূমপান করা
ধূমপান হৃদরোগ এবং ক্যানসারের কারণ হতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সিগারেটের ধোঁয়া আপনার হৃদয় এবং রক্তনালিগুলোকে সঙ্কীর্ণ করে এবং রক্তের পক্ষে আপনার অঙ্গে অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহ করতে শক্ত করে তোলে।
স্যাচুরেটেড ও ট্র্যান্স ফ্যাট গ্রহণ
যেসব খাবারে বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা জমাট বাঁধা চর্বি থাকে, সেসব খাবার খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে বেড়ে যায় হৃদরোগের ঝুঁকিও। চিজ, দই, লাল মাংস, মাখন, কেক, বিস্কুট ও নারিকেল তেলে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে।
রাত জেগে কাজ করা
অনেকেই রাত জেগে অফিসের কাজ করে থাকেন। রাত জেগে কাজ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে বসে কাজ করা, অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখার কারণেও হার্টে ব্লক হতে পারে।
হার্ট ভালো আছে বুঝার উপায়
অনেক সময় হার্ট অ্যাটাক হলেও তা সে ভাবে বোঝা যায় না। অসলে, কখনও কখনও বুকে কোনও রকম ব্যথা অনুভূত না হলেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। এ সব ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কিনা তা খুব বোঝা বেশ শক্ত! তবে আপনার হৃদযন্ত্র ঠিক মতো কাজ করছে কিনা, বা তার সুস্থতা সম্পর্কে জানার একটা সহজ পদ্ধতি আছে। এই বিশেষ পদ্ধতিতে হার্টের সুস্থতা সহজেই পরীক্ষা করা যায়। একাধিক গবেষণাতেও এই পরীক্ষা পদ্ধতির সাফল্যের প্রমাণি মিলেছে।
ধাপ ১: প্রথমে মাটিতে বসে নিয়ে পা দু’টি সামনের দিকে সোজা করে ছড়িয়ে রাখুন। খেয়াল রাখবেন, পা দু’টি এবং পায়ের আঙুলগুলি যেন কোনও ভাবেই ভাঁজ হয়ে না থাকে বা পা দু’টি যেন অবশ্যই সমান ভাবে জোড়া অবস্থায় থাকে।
ধাপ ২: এ বার পা দু’টি টানটান করে ছড়িয়ে রাখা অবস্থায় পায়ের আঙুলগুলি ছোঁয়ার চেষ্টা করুন।
ধাপ ৩: যদি আঙুলগুলি সহজেই ছুঁতে পারেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনার হার্টের স্বাস্থ্য একেবারে চাঙ্গা আছে। আর যদি না পারেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনার ব্লাড ভেসেলগুলি একেবারেই নমনীয় বা ফেক্সিবল নয়। সে জন্যই আপনি আপনার পায়ের আঙুল ছুঁতে পারছেন না। আর যদি এমন হয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বাড়িতে হার্ট রেট কিভাবে পরীক্ষা করবেন
বাড়িতে হার্ট রেট পরীক্ষা করার জন্যে নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি সহজে করতে পারেন:
১) প্রথমে আপনার ডানহাতের প্রথম দুই আঙ্গুল, অর্থাৎ তর্জনী ও মধ্যমা আঙুলটি প্ৰাম হাতের কব্জিতে রাখুন। এরপর, কব্জির ওপর আঙ্গুলগুলি হালকাভাবে চাপুন যাতে একটি হালকা কাঁপুনি অনুভব করেন। আপনি যে কম্পনগুলি অনুভব করছেন তার একটি স্পন্দন একটি হৃদস্পন্দনের সমতুল্য। এবারে ঘড়ি দেখুন এবং 20 সেকেন্ডের মধ্যে হার্টবিট গণনা করুন এবং সেই সংখ্যাটি 3 দ্বারা গুণ করলে আপনি আপনার হার্ট রেট গণনা করতে পারেন।
২) দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হলো ঘরের নাদির সাহায্যে হৃদস্পন্দন নির্ণয়। এক্ষেত্রে আপনি আপনার হাতের আঙুলগুলি ঘাড়ে চেপে ধরুন, আপনার উইন্ডপাইপের পাশে। দেখবেন আপনি ভাবে স্পন্দন অনুভব করবেন। এটিই হলো আপনার হৃদস্পন্দন, যা সহজে স্টপওয়াচের সাহায্যে গণনা করতে পারেন।
হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার
হার্টের রোগীদের কোন ধরনের খাবার খাওয়া সীমিত করা বা এড়িয়ে চলা উচিত, তার সংক্ষিপ্ত একটি তালিকা নিচে দেয়া হলো।
১. ফাস্ট ফুড
২. ভাজাপোড়া
৩. ক্যানে থাকা খাবার (এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম অতিরিক্ত লবণ ছাড়া শাকসবজি ও শিমজাতীয় খাবার)
৪. লজেন্স
৫. চিপস
৬. প্রক্রিয়াজাতকৃত ফ্রোজেন খাবার
৭. বিস্কুট ও কেক
৮. আইসক্রিম
৯. মেয়নেজ, কেচআপ
১০. লাল মাংস (খেলেও সামান্য পরিমাণে)
১১. অ্যালকোহল
১২. হাইড্রোজেনযুক্ত ভেজিটেবল অয়েল (এগুলোতে ট্রান্স ফ্যাট থাকে)
১৩. প্রক্রিয়াজাতকৃত মাংস
১৪. পিৎজা, বার্গার ও হট ডগ।
স্যাচুরেটেড ফ্যাট
হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট খাওয়ার সীমা নির্ধারণ করতে হবে। রোজকার মোট ক্যালোরির ৬ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয় স্যাচুরেটেড ফ্যাট। আপনার উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল থাকলে বিষয়টি মাথায় রাখা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের (এএইচএ) পরামর্শ হলো দিনে ২ হাজার ৩০০ মিলিগ্রামের বেশি সোডিয়াম না খাওয়া।
এএইচএর মতে, বিশেষত যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাদের উচিত হবে সোডিয়াম গ্রহণ দেড় হাজার মিলিগ্রামে নামিয়ে আনার চেষ্টা করা।
চা, কফি
কফি কিংবা চায়ের মতো পানীয় আপনার হৃৎপিণ্ডের জন্য ক্ষতিকর কি না, তা চিকিৎসককে জিজ্ঞাসা করুন। বাড়তি কোনো ক্রিম বা চিনি ছাড়া পরিমিত পরিমাণে এসব পানীয় পান করতে পারেন।
হার্টের জন্য উপকারী খাবার
শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতোই গুরুত্বপূর্ণ আমাদের হৃদযন্ত্র। সুস্থ থাকতে হলে তাই হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখতে হবে। খেতে হবে এমন খাবার, যা আপনার হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখবে।হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাদ্য তালিকার দিকে সবার নজর দেয়া উচিত। হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে খাবার।
কমলা
সুস্বাদু ফল কমলা। এটি আমাদের তৃষ্ণা মেটাতে সাহায্য করে। কমলায় রয়েছে ফাইবার, ভিটামিন সি, নিউট্রিসিয়ান্টস, পটাসিয়াম ও পেকটিন। এই ফল হৃদযন্ত্রকে সচল রাখে। এটি কোলেস্ট্রেরলও শোষণ করে থাকে।
বাঁধাকপি
হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে বাঁধাকপি যথেষ্ট। বাঁধাকপিতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার রয়েছে। ফ্যাট ও ক্যালোরি শোষণ করে থাকে বাঁধাকপি। তাই খাবারের তালিকায় বাঁধাকপি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
রসুন
রসুন খাওয়ার মধ্য দিয়ে হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখা সম্ভব। খাবারের রেসিপিতে রসুনের ব্যবহার দেহকে সবসময় সুস্থ রাখে। খাবারে রসুনের স্বাদ অসামান্য। রসুন এক প্রকার ওষুধও। এর মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
চকোলেট
চকোলেটে খেতে ভালোবাসে না এমন মানুষকে পাওয়া যাবে না। ডার্ক চকোলেট হৃদযন্ত্রকে হৃদরোগ ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত চকোলেট খেলে দেহ ও মন সুস্থ থাকে। তাই খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন চকোলেট।
সার্ডিন
হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে সার্ডিন। এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। সার্ডিন কোলেস্ট্রেরলকে শোষণ করে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
ডাল
যারা ডায়েট করছেন তাদের জন্য ডাল উপকারী খাবার। ডালে রয়েছে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও প্রোটিন। ডাল রক্তচাপ কমায় ও কোলেস্ট্রেরল শোষণ করে।
আমন্ড
আমন্ড সুস্বাদু বাদাম। গবেষণায় দেখা যায়, আমন্ড খেলে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত আমন্ড খাওয়ার মাধ্যমে ডায়েবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। আমন্ড কার্ডিওভাসকুলার রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
ডালিম
ডালিমে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। ফলটি কার্ডিওভাসকুলার রোগ প্রতিরোধ করে। গবেষণায় জানা যায়, ডালিম ক্যান্সার, ডায়েবেটিস, স্ট্রোক ও আলঝেইমার রোগ সারিয়ে তুলতে সক্ষম। এছাড়া ডালিমের মাধ্যমে চর্মরোগ, জয়েন্টের ব্যথা, দাঁতব্যথা ভালো হয়।
ব্লুবেরি
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন ব্লুবেরি ফল অনেক উপকারী। গবেষণায় জানা যায়, ব্লুবেরি ফলের খেলে রক্তচাপের ঝুঁকি কমে। ব্লুবেরি ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
বিটস
উচ্চস্তরের মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার বিটস। সুস্বাদু ও রঙিন ফল বিটস কার্ডিওভাসকুলার রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। গবেষণায় জানা যায়, এটি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
স্যামন
স্যামন এক ধরনের তেল জাতীয় মাছ। সাধারণত তেল জাতীয় মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও প্রচুর পুষ্টিগুণ থাকে। স্যামন হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
টার্মারিক
হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখার জন্য টার্মারিক উপাদেয় খাবার। টার্মারিকের মাধ্যমে কার্ডিয়াক হাইপারট্রফি বা হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায় টার্মারিক। আপনার খাদ্যতালিকায়ও টার্মারিক রাখতে পারেন।
সিয়া সিডস
স্বাস্থ্যকর খাবার সিয়া সিডস। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, নিউট্রিশন, ফাইবার, প্রোটিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে সিয়া সিডসে। সিয়া সিডস ক্যালোরি শোষণ করে নেয়। এর ফলে হৃদরোগ ও কার্ডিওভাসকুলার রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
আপেল
ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও মিনারেলসমৃদ্ধ আপেল রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। চিকিৎসকরা প্রায়ই আপেল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তারা বলে থাকেন, দিনে একটি আপেল দেহকে সুস্থ রাখে।
অ্যাভোক্যাডো
হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখার জন্য অ্যাভোক্যাডো অত্যন্ত উপকারী। এটি অনেক সুস্বাদু। পটাসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দ্বারা পরিপূর্ণ অ্যাভোক্যাডো হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বেগুন
মিনারেল, ফ্ল্যাভোনয়েড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ এগপ্ল্যান্ট কোলেস্ট্রেরল শুষে নেয়। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। মস্তিষ্কের জন্যও এটি উপকারী।
ব্রোকলি
ব্রোকলি জনপ্রিয় একটি সবজি। কোলেস্ট্রোরল শুষে নেয় এটি। শরীরের রক্ত চলাচলে সাহায্য করে ব্রোকলি। পাশাপাশি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
গাজর
গাজর অত্যন্ত সুস্বাদু একটি সবজি। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। পুষ্টিগুণসম্পন্ন গাজর খেলে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকবে। মস্তিষ্কের জন্যও উপকারী খাবার এটি।
মুরগির মাংস
মুরগির মাংস আমিষ জাতীয় খাবার। এটি কোলেস্ট্রেরল শুষে নেয়। অনেকেই এটি খেতে পছন্দ করেন। শরীরের স্বাভাবিক বিকাশে এই মাংস অনেক উপকারী। হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখার জন্যও এটি উপকারী খাবার।
ছোলা
পটাসিয়াম, ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ছোলা অত্যন্ত উপাদেয় খাবার। এটি কোলেস্ট্রেরল শুষে নেয় ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। ছোলা কাঁচা এবং রান্না করে দুই উপায়েই খাওয়া যায়।
কফি
হৃদযন্ত্রের সুরক্ষার জন্য কফি অত্যন্ত উপকারী খাবার। গবেষণায় দেখা গেছে, হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও করোনারি হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে পারে কফি। তবে একসঙ্গে খুব বেশি কফি খাবেন না। প্রতিদিন এক-দুই কাপ কফি খেলেই যথেষ্ট।
গ্রিন টি
হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখার জন্য গ্রিন টি অনেক উপকারী। গ্রিন টি কোলেস্ট্রেরল শুষে নেয়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ গ্রিন টি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। সাধারণ চায়ের বদলে নিয়মিত পান করতে পারেন গ্রিন টি।
সবুজ শাকসবজি
পালংশাক, কালে এবং কলার সবুজ শাকসবজি ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের জন্য সুপরিচিত। বিশেষ করে এগুলো ভিটামিন কে-এর একটি দুর্দান্ত উৎস, যা আপনার ধমনিকে রক্ষা করতে এবং সঠিক রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে। সবুজ শাকসবজিতে ডায়েটারি নাইট্রেটের পরিমাণও বেশি থাকে, যা রক্তচাপ কমাতে ও ধমনির দৃঢ়তা হ্রাস করতে এবং রক্তনালীগুলোর আস্তরণের কোষগুলোর কার্যকারিতা উন্নত করে।
আস্ত শস্যদানা
পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। কিন্তু গোটা শস্য সুরক্ষামূলক।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি করে গোটা শস্য খাওয়া আপনার হার্টের স্বাস্থ্যের উপকার করতে পারে। গোটা শস্য খেলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, বিপাকীয় সিন্ড্রোম ইত্যাদি রোগ মোকাবিলা করা সহজ হয়।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হলো অত্যাবশ্যক পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ওমেগা-৩ যুক্ত খাবার নিয়মিত খেলে তা কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমে প্রদাহ কমাতে, হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করতে, রক্ত জমাট বাঁধা কমাতে এবং রক্তচাপ কমাতে কাজ করে। ওমেগা-৩ এর ভালো উৎস রয়েছে এমন কিছু খাবার আইটেম হলো মাছ এবং বীজ যেমন তিসি, তুলসীর বীজ, চিয়া বীজ এবং আখরোট।
এ ছাড়া স্যালমন, ম্যাকেরেল, সার্ডিনস এবং টুনা মত চর্বিযুক্ত মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে। এসব মাছ খেলে কার্ডিওভাসকুলার রোগ ও বিষণ্নতা কমে।
সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে Naturicare আয়ুর্বেদিক পণ্য কিনতে, এখানে ক্লিক করুন, click here
Naturicare.in
FAQ | হার্ট
Q1. হার্টের রোগীর কী খাওয়া উচিত নয়
Ans – খাদ্য স্পেশালিষ্টরা বলেন, যেসব খাবারে বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা জমাট-বাঁধা চর্বি থাকে সেসব খাবার খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে বেড়ে যায় হৃদরোগের ঝুঁকিও। কিছু খাবার যেমন দুধ, দই, মাখন, চিজ, মাংস, কেক, বিস্কুট ও তেল জাতীয় খাবার ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট থাকে।
Q2. হার্ট দুর্বল হয়ে পড়লে কি হয়
Ans – যখন আমাদের হার্ট দুর্বল হয়ে যায় তখন আরও দ্রুত রক্ত পাম্প করার চেষ্টা করে আর তার ফলে অতিরিক্ত কাজ করতে শুরু করে দেয় যা হার্ট ফেইলিওরের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তবে এটা একদিনে ঘটে না, দীর্ঘ সময়ের একত্রিত ফল এটি।