Table of Contents
ব্লাড সুগার কি
যখন কোনও ব্যক্তির রক্তে গ্লুকোজ বা রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি হয়, তখন তাকে ডায়াবেটিস বলে। ব্লাড সুগার বা গ্লুকোজ হল রক্তের প্রধান চিনি। আমরা যে খাবারটি খাই তার থেকে গুলুকজ পেয়ে থাকি। এই চিনি শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্স এবং শরীরের অঙ্গ, পেশী এবং স্নায়ুতন্ত্রের পুষ্টি সরবরাহ করে।
বর্তমানে ডায়াবেটিস একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ।একটা বয়সের পর বহু মানুষের ই ডায়াবেটিস এর সমস্যা চলে আসে ।প্রতি বাড়িতেই কেউ না কেউ ডায়াবেটিস এ ভোগেন ।একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে প্রায় ৪২২ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিস এর সঙ্গে লড়াই করছেন ।প্রতিবছর এই রোগে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়।
ডায়াবেটিস এর প্রকার
টাইপ ১ ডায়াবেটিস: যদি আমাদের শরীরে অগ্ন্যাশয় কম ইন্সুলিন তৈরী হয় বা একেবারেই তৈরী হয়না তবে এটি আমাদের রক্তে শর্করার সঠিক মাত্রায় রাখতে পারে না। একে টাইপ-১ ডায়াবেটিস বলা হয় এবং এটি প্রায় বাচ্চাদের হয়।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস: এই ধরনের ডায়াবেটিসে, আমাদের অগ্ন্যাশয় ভালোভাবে কাজ করে এবং ইনসুলিন তৈরি করে, কিন্তু আমাদের শরীর তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। এর মানে হল যে আমাদের রক্তে শর্করা যেমন নিয়ন্ত্রণ হওয়া উচিত তেমন হয় না। পরিবর্তে, এটি বাড়তে থাকে। এর ফলে আমাদের কিডনি, হার্ট এবং চোখের সমস্যা হতে পারে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়, তবে এখন বাচ্চাদেরও হয়। কখনও কখনও, এর লক্ষণ দেখা দিতে সময় লাগে, তাই আমাদের শরীরের যত্ন নেওয়া এবং সুস্থ থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
ডায়াবেটিস এর লক্ষন
- যখন কারোর ডায়াবেটিস থাকে, তখন তার শরীরে যে অতিরিক্ত ইনসুলিন থাকে কাজে আসেনা ফলে শরীরে শর্করার মাত্রা বেনে যায়। তাই ঘন ঘন বাথরুমে যেতে হয়।
- যখন রক্তে খুব বেশি গ্লুকোজ থাকে, তখন এটি আমাদের শরীরের চারপাশে গ্লুকোজ বহনকারী টিউব গুলিতে আঘাত করতে পারে। এর ফলে আমাদের ক্লান্ত এবং মাথা ঘোরা বোধ হয় এবং আমরা কিছুটা কাঁপতেও পারি কারণ সঠিক পুষ্টি শরীর পায়না।
- আমাদের শরীরের প্রায় ৭০% জল গঠিত। যখন কারও ডায়াবেটিস হয়, তখন তারা প্রস্রাব এবং ঘামের মাধ্যমে জল বেরিয়ে যায়। যার ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
- অনেক সময় গ্লুকোজে এর পরিমান বেড়ে গেলে কোনো ঘা শোকাতেও সময় লাগে।
- ডায়াবেটিস রোগীদের চোখের আকৃতির পরিবর্তনের কারণে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায়, এবং মনি ফুলে যায়। যদি চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে চির দৃষ্টিহীন ও হতে পারে।
- ডায়াবেটিস স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে এবং মস্তিষ্ককে প্রভাবিত ফেলতে পারে, তাই সম্ভাব্য রোগীদের তাৎক্ষণিক স্মৃতিশক্তি হ্রাস হয়ে থাকে।
- অগ্ন্যাশয় পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি না করলে আমাদের শরীরে উৎপন্ন গ্লুকোজ অকার্যকর হয়ে পড়ে। যখন এটি প্রস্রাবের মাধ্যমে নির্গত হয়, তখন আমাদের শরীরে শক্তির অভাব হয়। এর ফলে দুর্বলতা, ক্লান্তি এবং অলসতা দেখা দেয়। এর জন্য আমরা ঘন ঘন খিদে অনুভব করি কারণ আমাদের শরীরে খাওয়া থেকে অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন হয়।
- ডায়াবেটিস শরীর থেকে অতিরিক্ত জলের প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়, যার ফলে জলের ঘাটতি দেখা দেয়। এর ফলে ঘন ঘন জলের তৃষ্ণা হয়।
রক্তে সুগারের স্বাভাবিক লেভেল
প্রথমবার ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পরে ডাক্তারের কাছ থেকে নিচের দুটি বিষয় জেনে নিন—
- আপনার রক্তে সুগারের মাত্রা কেমন
- সুগার কোন মাত্রায় নামিয়ে আনা প্রয়োজন
ঘরে বসেই রক্তে সুগারের মাত্রা মাপার মেশিন বা গ্লুকোমিটারের সাহায্যে নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করে রক্তে সুগারের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা যায়। অথবা ২-৩ মাস পরপর হাসপাতালে গিয়ে এইচবিএওয়ানসি (HbA1c) নামক ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন। এই পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে সুগারের গড় মাত্রা এবং সুগার নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কি না সেই সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। সাধারণত HbA1c এর মান ৬.৫% এর নিচে থাকা ভালো।
সবার ক্ষেত্রে রক্তে সুগারের লক্ষ্যমাত্রা একই হয় না। তবে সাধারণত নিচের লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে ব্লাড সুগারের স্বাভাবিক মাত্রা হিসেবে ধরা হয়—
- গ্লুকোমিটার: খালিপেটে ৪ থেকে ৭ মিলিমোল/লিটার এবং খাওয়ার ২ ঘন্টা পরে ৮.৫ থেকে ৯ মিলিমোল/লিটার
- এইচবিএওয়ানসি (HbA1c) টেস্ট: ৬.৫ শতাংশ বা ৪৮ মিলিমোল/মোলের নিচে
সুগার কমানোর ঘরোয়া উপায়
ডায়াবেটিস ধরা পড়লেই ডাক্তারেরা হাজার হাজার ওষুধ খেতে বলেন । তবে শুধু ওষুধ না ঘরোয়া কিছু খাবারেই শরীরের শর্করা থাকবে নিয়ন্ত্রণে।
ব্লাড সুগার কমানোর জন্য ওষুধ
টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে ইনসুলিন ইঞ্জেশনের মাধ্যমে রক্তে ইনজেক্ট করা প্রয়োজন। টাইপ ২ রোগীদের সামান্য কিছু ওষুধ গ্রহণ করলেই চলে। ইনসুলিন নেবার পর তার প্রকৃত কাজ হতে ছয় ঘন্টা সময় লাগে। তারপরে ৩৬ ঘন্টা পর্যন্ত এর কার্যকারিতা থাকে।
সুষম খাবার গ্রহণ
উচ্চফাইবারযুক্ত, স্বাস্থ্যকর চর্বি যুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে যব বা ওটস খাওয়া উচিত। ফাইবার যুক্ত খাবার খেলে বারবার খিদে পায়না। এছাড়াও পুষ্টিকর চর্বি যুক্ত খাদ্য যেমন কাঠবাদাম, বাদাম এগুলো খাওয়া প্রয়োজন তবে অবশ্যই ডাক্তারের নির্দেশ মেনে তা করা প্রয়োজন।
নিয়মিত হাঁটাহাঁটির অভ্যাস
ব্লাড সুগার কমানোর উপায় আলোচনা করতে গেলে আমরা হাঁটার কথা এড়িয়ে চলতে পারি না। নিয়মিত ২৫-৩০ মিনিট হাঁটলে সুগার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। নিয়মিত ব্যায়াম ওজন হ্রাস করতে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারেন।
ব্যায়াম
নির্দিষ্ট মাত্রা ব্যায়াম করা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং ব্লাড সুগার স্তর নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। মানসিক ব্যায়াম, যেমন ধ্যান করা, এবং বিশ্রাম গ্রহণ করা, স্ট্রেস নির্মূল করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
মিষ্টি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
মিষ্টিযুক্ত খাবার খাওয়া সুগারের রোগীদের একদমই উচিত নয়। বিশেষত চিনি। চিনি ব্লাড সুগারের লেভেল হাই করে দেয়। চিনি ছাড়া চা পান করুন। এছাড়া আইসক্রিম, ফাস্ট ফুড খাবেন না। কারন এই খাবার শরীরে ইনসুলিনের মাত্রায় ক্ষতি করতে পারে। প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
প্রচুর জলপানের প্রয়োজন
নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করলে আপনার ব্লাড সুগার সুস্থ সীমায় থাকতে সহায়তা করবে। সুগারের রোগীদের শরীর হাইড্রেট রাখা প্রয়োজন। আর তা সম্ভব পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পানের মাধ্যমে। নিয়মিত জল পান করলে রক্ত পুনরায় হাইড্রয়েট হয়, রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করে।
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বর্জন
দুটি ধরনের কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। প্রথম প্রকার, চাল এবং চিনির মতো সাধারণ কার্বোহাইড্রেট গুলি দ্রুত আমাদের দেহে ভেঙে যায় এবং আমাদের দ্রুত শক্তি দেয়। দ্বিতীয় প্রকার, কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট, যেমন গম, ভেঙে যেতে বেশি সময় নেয় এবং ধীরে ধীরে আমাদের শক্তি দেয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করার জন্য জটিল কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খাওয়া আবশ্যক।
পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন
পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম দেহের ক্লান্তি এবং চাপ দূর করতে সক্ষম। অতিরিক্ত চাপের কারনে সুগার হাই হয়ে যায়। তাই আপনি যদি নিজের সুগার নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ থাকতে চান তাহলে সঠিক ঘুম এবং বিশ্রামের বিশেষ প্রয়োজন।
টেনশন করা ছাড়ুন
অতিরিক্ত চিন্তা করলে ব্লাড সুগারের উপর প্রভাব পড়ে। ডাক্তারদের মতে হাই সুগারের অন্যতম কারন হল অতিরিক্ত টেনশন। অতিরিক্ত টেনশন করলে শরীরে চাপ পড়ে এবং হরমোনগুলি রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। তাই রিল্যাক্স থাকার চেষ্টা করুন। এতে শরীরে কর্টিসোল হরমোনের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং ব্লাড সুগারের ঝুঁকি কমবে।
গ্রিন টি
সুগার রোগীরা গ্রিন টি খেতে পারেন। গ্রিন টি উচ্চ পরিমাণে পলিফেনল পাওয়া যায়। যা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
নিজেরাই একটু সতর্ক হলে সুগারের মতো মারাত্মক রোগের হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করা যেতে পারে। সুগার কমানোর উপরের এই নির্দেশগুলি অবলম্বন করে চললে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই মেনে চলতে হবে এবং সময়মতো ঔষধ গ্রহণ করুন।
সুগার রোগীর খাদ্য তালিকা
একটি স্বাস্থ্যকর ও সুষম ডায়েটের জন্য পাচঁটি প্রধান গ্রুপ বা পদের খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এসব হচ্ছে—
- ফলমূল ও শাকসবজি
- শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার। যেমন: লাল বা বাদামী চালের ভাত, লাল আটার রুটি বা পাউরুটি
- প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। যেমন: ডিম, মাছ, মাংস, শিম ও অন্যান্য বীন, ডাল, বিভিন্ন ধরনের বাদাম
- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার। যেমন: দই, ছানা ও পনির
- বিভিন্ন ধরনের তেল, মাখন, ঘি
আপনার দৈনিক কতটুকু খাবার ও পানীয় প্রয়োজন তা নির্ভর করে আপনার বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক পরিশ্রম এবং আপনি আপনার ওজন ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী ধরনের লক্ষ্য নির্ধারণ করছেন তার ওপর। সুষম খাদ্যাভ্যাসের অর্থ হল নির্দিষ্ট কিছু খাবার বেশি পরিমাণে এবং অন্যান্য খাবারগুলো কম পরিমাণে খাওয়া। আবার, কেবল এক ধরনের খাবার দেহের সব পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মূল হল বৈচিত্র্য। এই বৈচিত্র্য আনা যায় প্রতিদিন মূল পাঁচটি গ্রুপের প্রত্যেকটি থেকে বিভিন্ন খাবার বেছে নেওয়ার মাধ্যমে।
এখন পাঁচটি গ্রুপের প্রতিটির ভূমিকা, উপকারিতা, কোন গ্রুপ থেকে কী পরিমাণে খাবেন এবং কী কী খেতে পারেন তা তুলে ধরছি।
ফল ও সবজি
ডায়াবেটিস থাকলে যে আপনি ফলমূল খেতে পারবেন না এমন কোন কথা নেই। ফলমূল ও শাকসবজিতে সাধারণত ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে; এগুলো প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ ও আঁশ তথা ফাইবারে পরিপূর্ণ। তাছাড়া এগুলো প্রত্যেক বেলার খাবারে নতুন স্বাদ ও বৈচিত্র্য যোগ করে।
টাটকা, ফ্রোজেন, শুকানো কিংবা ক্যান ও টিনের বোতলে প্রক্রিয়াজাত যেকোন ধরনের ফলই খাওয়া যায়। শরীরের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের চাহিদা পুরণ করার জন্য যত প্রকারের রঙ-বেরঙের ফল খাবেন, ততই ভালো। তবে ফলের জুস ও স্মুদি না খেলেই ভালো, কারণ এতে আঁশের পরিমাণ খুব কম থাকে।
আপনি যদি খাদ্যতালিকায় থাকা শর্করার পরিমাণ কমিয়ে এনে লো-কার্ব ডায়েট মেনে চলতে চান, তাহলে হয়তো আপনি খাদ্যতালিকা থেকে ফল ও শাকসবজি বাদ দিতে চাইবেন। তবে এমনটা না করে এগুলো আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে নিচের তালিকা থেকে তুলনামূলকভাবে কম শর্করাযুক্ত শাকসবজি ও ফলমূল বেছে নিন।
ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার উপকারিতা
- আপনার পরিপাকতন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে
- আপনার শরীরকে হার্টের বিভিন্ন সমস্যা, স্ট্রোক ও কয়েক ধরনের ক্যান্সার থেকে সুরক্ষিত রাখে
কী পরিমাণে ফলমূল ও শাকসবজি খাবেন?
দিনে অন্তত পাঁচ পরিবেশন ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন। এক পরিবেশন = এক হাতের তালুতে যে পরিমাণ খাবার আঁটে।
ডায়াবেটিস রোগী কোন ফল ও শাকসবজি খেতে পারেন?
- এক ফালি বাঙ্গি বা জাম্বুরা খেতে পারেন, সাথে একটু টক দই মিশিয়ে নিতে পারেন। যেকোনো ধরনের মৌসুমি ফলই খাওয়া ভালো
- খেজুর, আলুবোখারা এগুলোও খাওয়া যায়
- খিচুড়ি, পাস্তা ও অন্যান্য রান্নায় গাজর, মটরশুঁটি, বরবটি ও শিম ব্যবহার করুন
- ভাতের সাথে মটরশুঁটি, মাংসে বেশি করে পেঁয়াজ বা একমুঠো পালংশাকও যোগ করা যেতে পারে
- কম শর্করাযুক্ত শাকসবজির উৎস হিসেবে মাশরুম, শশা, পালংশাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি ও লেটুস খাওয়া যেতে পারে
- বরই ও তরমুজ কম শর্করাযুক্ত ফলের ভালো উৎস। যারা দেশের বাইরে থাকেন তারা বিদেশি ফলের মধ্যে আভোকাডো, পীচ ও বিভিন্ন বেরি খেতে পারেন
শ্বেতসার-সমৃদ্ধ খাবার
শ্বেতসার-সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে আলু, ভাত, রুটি, নানরুটি, পাস্তা, পাউরুটি ও কাঁচকলা। এগুলোর সবগুলোতেই শর্করা থাকে, যেগুলো আমাদের শরীরের ভেতরে ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত হয়। এই গ্লুকোজই আমাদের দেহের কোষগুলোর জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।
সমস্যা হল, কিছু শ্বেতসারজাতীয় খাবার খুব দ্রুত রক্তে সুগার তথা গ্লুকজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এসব খাবারকে বলা হয় উচ্চ ‘গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই)’-যুক্ত খাবার।
কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের খাবারগুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ভালো। এমন কিছু শ্বেতসারজাতীয় খাবার হল লাল চাল ও বাসমতি চালের ভাত, লাল আটার রুটি ও পাস্তা এবং লাল আটার পাউরুটি। এগুলোতে আঁশের পরিমাণও বেশি থাকে, যা আপনার পরিপাকতন্ত্রকে ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। তাই খাবারে শর্করার পরিমাণ কমাতে চাইলে আগে সাদা চালের ভাত ও সাধারণ আটা-ময়দার রুটি ও পাউরুটি খাওয়া কমান।
শ্বেতসার-সমৃদ্ধ খাবারের উপকারিতা
- এসব খাবারের আঁশ আপনার পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে
- নির্দিষ্ট কিছু শ্বেতসার আপনার রক্তে সুগারের মাত্রাকে ধীরে ধীরে প্রভাবিত করে
- গোটা শস্যদানা আপনার হার্টকে সুরক্ষিত রাখে
কী পরিমাণ শ্বেতসার-সমৃদ্ধ খাবার খাবেন?
প্রতিদিনই কিছু পরিমাণে শ্বেতসারযুক্ত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
ডায়াবেটিস রোগী কোন শ্বেতসার-সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন?
- লাল চালের ভাত
- লাল আটার রুটি, চাপাতি, পাস্তা ও নুডল্স
- বিভিন্ন ধরনের শস্যদানা থেকে বানানো হোল্গ্রেইন ও মাল্টিগ্রেইন পাউরুটি
- খোসাসহ সেদ্ধ বা বেক করা মিষ্টি আলু
প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার
ডিম ও মাছ-মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা আপনার পেশীকে সুস্থ রাখে। কিন্তু স্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাস গড়ে তুলতে খাদ্যতালিকা থেকে লাল মাংস (যেমন গরু, খাসি ও ভেড়ার মাংস) ও প্রক্রিয়াজাত মাংস (সসেজ, পেপারনি ও সালামি)-এর পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে, কারণ এগুলো খাওয়ার সাথে ক্যান্সার ও হার্টের রোগের সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
সামুদ্রিক মাছসহ বিভিন্ন তৈলাক্ত মাছে প্রচুর ওমেগা-৩ থাকে, যা হার্টকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। অন্যান্য প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে শিম, বরবটি ও অন্যান্য বীনজাতীয় খাবার, ডাল এবং বিভিন্ন ধরনের বাদাম; যারা নিরামিষাশী বা ভেগান খাদ্যাভ্যাস মেনে চলেন তাদের জন্য এগুলো প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করে।
প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবারের উপকারিতা
- এগুলো আপনার পেশীকে সুস্থ রাখে
- তৈলাক্ত মাছ আপনার হার্টকে সুস্থ রাখে
কী পরিমাণ প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার খাবেন?
প্রতিদিনই এই গ্রুপ থেকে কিছু কিছু খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে সপ্তাহে এক বা দুই পরিবেশন তৈলাক্ত মাছ খান, তবে প্রতিদিন মাংস খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
ডায়াবেটিস রোগী কোন প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন?
- নাস্তায় ছোট এক মুঠ বাদাম খাওয়া যেতে পারে, প্রয়োজনে সালাদের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন
- মাংসের পরিবর্তে রান্নায় ডাল বা শিমের বীচি ব্যবহার করতে পারেন
- ডিম সেদ্ধ, পোচ বা ভাজি – যেভাবে আপনার পছন্দ সেভাবেই খেতে পারেন
- কম তেল-মশলায় রান্না, গ্রিল ও বেক করা মাছ-মাংস খাওয়া যেতে পারে
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
দুধ, পনির ও দই-এ প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন থাকে, যা আপনার হাড়, দাঁত ও পেশীর গঠনের জন্য খুব উপকারী। কিন্তু কিছু দুগ্ধজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণে চর্বি, বিশেষ করে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই কম চর্বিযুক্ত বিকল্পগুলো বেছে নেওয়া জরুরি।
তবে সেক্ষেত্রে এসব বিকল্প যেন অতিরিক্ত চিনিমুক্ত হয় সে ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে।
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারের উপকারিতা
- হাড় ও দাঁতের গঠনের জন্য উপকারী
- আপনার পেশীকে সুস্থ রাখে
কী পরিমাণ দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খাবেন?
আমাদের প্রতিদিনই গড়ে ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন।
ডায়াবেটিস রোগী কোন দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খেতে পারেন?
- এক গ্লাস দুধ সরাসরি খেতে পারেন, বা গন্ধ ভালো না লাগলে এতে অল্প পরিমাণে দারুচিনি দিয়ে নিতে পারেন। ওটস বা নাস্তায় সিরিয়ালের সাথে মিশিয়েও দুধ খেতে পারেন
- ফল বা তরকারির সাথে টক দই মিশিয়ে খাওয়া যায়
- গাজর ও শসার সাথে পনির খেতে পারেন নাস্তা হিসেবে
- সন্ধ্যার নাস্তার সাথে লাচ্ছি, মাঠা বা সাধারণ দই খেতে পারেন
চর্বি ও বিভিন্ন ধরনের তেল
ডায়াবেটিস রোগীর দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় কিছু চর্বিজাতীয় খাবার থাকা প্রয়োজন। তবে স্যাচুরেটেড ফ্যাট প্রয়োজন খুব কম। স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়, যা পরবর্তীতে হার্টের বিভিন্ন রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। মাখন, নারিকেল তেল ও পাম অয়েল এ ধরনের অধিক স্যাচুরেটেড ফ্যাট-যুক্ত তেল।
এগুলোর স্বাস্থ্যকর বিকল্প হলো কম পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট আছে এমন তেল (যেমন: অলিভ অয়েল বা অন্যান্য ভেজিটেবল অয়েল) ও বাদাম থেকে তৈরি বাটার (যেমন: পিনাট বাটার, আমন্ড বাটার)।
চর্বি ও তেলের উপকারিতা
- অসম্পৃক্ত বা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট আপনার হার্টকে সুস্থ রাখে
ডায়াবেটিস রোগী কোন তেল খেতে পারেন?
- সালাদে অল্প পরিমাণে অলিভ অয়েল দিয়ে খেতে পারেন
- টোস্টের সাথে সাধারণ মাখনের পরিবর্তে পিনাট বাটার খেতে পারেন
ডায়াবেটিস রোগী যে খাবার এড়িয়ে চলবেন
অতিরিক্ত চর্বি, লবণ ও চিনিসমৃদ্ধ খাবার—এসব যত কম খাওয়া যায়, ততই ভালো। কিন্তু আমরা জানি সব সময় এসব খাবার এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়, তাই আপনার শরীরের ওপর এগুলো কী ধরনের প্রভাব ফেলে সে সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি।
এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে বিস্কুট, চিপ্স, চকলেট, কেক, আইসক্রিম, মাখন ও অতিরিক্ত চিনি দেওয়া কোমল পানীয়। এসব খাবার ও পানীয়তে প্রচুর ক্যালরি রয়েছে, এবং এরা রক্তে সুগারের মাত্রা অনেক বাড়িয়ে দেয়। তাই চিনিমুক্ত, কম ক্যালরির বিকল্প খুঁজে নিতে হবে। সবচেয়ে ভালো, উপাদেয় পানীয় হল পানি—এতে কোনো ক্যালরি নেই।
এগুলোতে অস্বাস্থ্যকর স্যাচুরেটেড ফ্যাটও প্রচুর পরিমাণে থাকে। তাই এগুলো রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং আপনার হার্টের স্বাস্থ্য—কোনটির জন্যই মোটেও ভালো নয়। এছাড়া এসব খাবারে, বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রচুর লবণও থাকে। অতিরিক্ত লবণ উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। দিনে মোট ১ চা চামচ (৬ গ্রাম) এর বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়।
এসব খাবার খাওয়া কমানোর উপায়
- সম্পূর্ণভাবে বাড়িতে রান্না করা খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে আপনি কী পরিমাণে লবণ খাচ্ছেন তা সঠিকভাবে খেয়াল রাখতে পারবেন।
- চিনি ছাড়া চা-কফি খাওয়ার চেষ্টা করুন। এগুলো ফলের জুস বা স্মুদির থেকে ভালো, কারণ তাতে অতিরিক্ত শর্করা বা ক্যালরি থাকে না।
- খাবারের সাথে কাঁচা লবণ খাওয়া বন্ধ করে দিন – এর পরিবর্তে গোল মরিচের গুঁড়া এবং অন্যান্য মশলা ও হার্ব ব্যবহার করে স্বাদে নতুনত্ব আনা যেতে পারে।
- দোকানের সস ও মশলা মিক্স না কিনে বাড়িতেই বিভিন্ন সস ও ম্যারিনেট করার মশলা তৈরী করে খান।
একটি সুগার রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির মান নিয়ে নিম্নলিখিত খাদ্য তালিকা দেওয়া হলো। তালিকার মধ্যে খাদ্যের নাম, প্রতি 100 গ্রামে পুষ্টির পরিমাণ, ক্যালোরি, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, এবং কোলেস্টেরল সহ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
খাদ্যের নাম | ক্যালোরি | কার্বোহাইড্রেট (গ্রাম) | প্রোটিন (গ্রাম) | ফ্যাট (গ্রাম) | কোলেস্টেরল (মিলিগ্রাম) |
---|---|---|---|---|---|
ধনে-পাতা | 23 | 3.67 | 2.13 | 0.52 | 0 |
গাজর | 41 | 9.58 | 0.93 | 0.24 | 0 |
শিম | 20 | 4.97 | 0.92 | 0.16 | 0 |
কলা | 89 | 22.84 | 1.09 | 0.33 | 0 |
আঙ্গুর | 69 | 18.10 | 0.72 | 0.36 | 0 |
পেঁপে | 43 | 10.42 | 0.63 | 0.19 | 0 |
বাদাম | 579 | 21.69 | 21.22 | 49.42 | 0 |
মাছ | 206 | 0.00 | 20.26 | 13.77 | 69 |
ময়দা | 364 | 74.31 | 9.91 | 1.19 | 0 |
কাজু বাদাম | 597 | 21.67 | 21.22 | 49.42 | 0 |
প্রয়োজনীয় ক্যালোরি:
- একজন মধ্য বয়সী বা বৃদ্ধ ডায়াবেটিস রোগীর সঙ্গে ১০০০ – ১৬০০ Kcal প্রয়োজন।
- একটি বয়স্ক ডায়াবেটিস রুগীর ১৪০০ -১৮০০ Kcal র বেশি ওজন হবে না।
- একজন কম বয়সী ডায়াবেটিস রুগী হবে ১৮০০ -৩০০০ কিলোগ্রাম।
- প্রতিদিন কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের পরিমাণ: প্রায় মোট ক্যালোরি ১৮০ গ্রাম।
- প্রতিদিন প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ: ৬০ গ্রাম থেকে ১১০ গ্রাম।
- প্রতিদিন ফ্যাট গ্রহণের পরিমাণ: ৫০ গ্রাম থেকে ১৫০ গ্রাম।
প্রত্যেক ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যতালিকা পৃথক হবে। বয়স, ওজন ও উচ্চতা, কাজের ধরন, কায়িক শ্রমের পরিমাণ, জীবনযাপন পদ্ধতি, আর্থিক অবস্থা সবকিছু বিবেচনায় এনে এ তালিকা করা হয়। ডায়াবেটিস হলেই সব খাওয়া নিষেধ, তা নয়। তবে খাদ্য বাছাইয়ে সতর্ক ও সুশৃঙ্খল হতে হবে। পুনরাবৃত্তি ও বিরক্তি ঠেকাতে রোজ একই ধরনের খাবার না খেয়ে বৈচিত্র্য আনারও চেষ্টা করতে হবে। অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতো একজন ডায়াবেটিস রোগী সব কটি খাদ্য উপাদান মানে শর্করা, আমিষ, চর্বি, খনিজ, ভিটামিন ইত্যাদি গ্রহণ করবেন।
দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণের সহজ কিছু টিপস আছে। নিয়মিত এগুলো মেনে চললে নিজেরাই শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
- প্রতি বেলার খাবার খেতে হবে সময়মতো।
- প্রতিদিন ৩৫-৪০ মিনিট দ্রুত হাঁটা।
- ডায়াবেটিক ব্যক্তি সকালে, দুপুরের খাবার, এবং ডিনার খাবার মাঝে কিছু হাল্কা খাবার খেতে পারে।
- তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
- ডায়াবেটিক ব্যক্তিদের ধীরে ধীরে খাদ্য খেতে হবে।
- ফাইবার জাতীয় খাবার খেতে হবে। এটি রক্তে ধীরে ধীরে গ্লুকোজ স্তর বাড়ায় এবং নিয়ন্ত্রণ রাখে।
- কী পরিমাণ খাওয়া হচ্ছে, এটাও গুরুত্বপূর্ণ। তৈরি খাবার বেশি পরিমাণে না খেয়ে অল্প অল্প পরিমাণেও তো খাওয়া যায়।
- আঁশযুক্ত গোটা শস্য খাওয়ার প্রবণতা বাড়াতে হবে।। ময়দার রুটি আর মিলে ছাঁটা চালের বদলে লাল আটার রুটি বা ঢেঁকিছাঁটা চালের ভাত খেলে ভালো। গোল আলু, যতটা পারা যায় কম খেতে হবে। আলু খেতে হলে অবশ্যই তা ভাত বা রুটি ইত্যাদির পরিবর্তে হবে, সবজি বা শাকের বিকল্প হিসেবে নয়।
- অতিরিক্ত লবণ ও চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করুন। প্রতিদিন কিছু পরিমাণ শাকসবজি ও ফলমূল খান।
- ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয় পরিহার করুন। প্রতিদিন পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করুন।
- বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে পরিবেশিত অস্বাস্থ্যকর খাদ্য বর্জনীয়।
ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
যে খাবার গুলি আপনাকে এড়িয়ে চলতে হবে-
- লবণ: লবণ ডায়াবেটিকসের জন্য প্রধান দায়ী। আপনি যে কোন ফল বা সবজি থেকে আপনি যথেষ্ট লবণ গ্রহণ করে থাকেন তাই যতটা সম্ভব লবণ কম খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- চিনি:সুক্রোজ, একটি টেবিল চিনি, ক্যালোরি এবং কার্বোহাইড্রেট ছাড়া কিছুই প্রদান করে না। এছাড়াও, আপনার সুক্রোজ হজম করার জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন। মধু, গুড় ইত্যাদি গ্রহণ করুন যাতে প্রাকৃতিক ভাবেচিনি রয়েছে।
- চর্বি: অত্যধিক চর্বি গ্রহণ করা অবশ্যই একটি ভাল অভ্যাস নয়। তেলে ভাজা জাতীয় খাবার সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করা উচিৎ। তবে এটা মনে রাখবেন যে আপনাকে অল্প পরিমাণ তেল গ্রহণ করতে হবে যাতে চর্বিযুক্ত ভিটামিনগুলি, বিশেষ করে ভিটামিন ই হজমে সুবিধা হয়।
- আমিষভোজীদের জন্য: লাল মাংস গ্রহণ করা বন্ধ করুন। নিরামিষী খবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। একটি নিরামিষ খাদ্য জন্য যেতে চেষ্টা করুন।যদি আপনি তা না করতে পারেন তাহলে আপনি পলটির ডিম খেতে পারেন। এছাড়াও আপনি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার মাছ খেতে পারেন।
- দুগ্ধজাত দ্রব্য: কম ফ্যাট জাতীয় দুধ যেমন দই খেতে পারেন। হাই ফ্যাট চিসসের বদলে লো ফ্যাট চিস খেতে পারেন।
- চা এবং কফি: প্রতিদিন দু কাপের বেশি চা বা কফি খাবেন না। আয়ুর্বেদিক চা খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- ময়দা এবং ময়দার তৈরি দ্রব্য: ময়দার বদলে আটার জিনিস খাওয়া শুরু করুন, এছাড়া সয়াবিন এবং ভাত খেতে পারেন।
- উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাবার: ভাত, আলু, গাজর, পাউরুটি এবং কলা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন কারণ এগুলি রক্তে চিনির মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে Naturicare আয়ুর্বেদিক পণ্য কিনতে, এখানে ক্লিক করুন, click here
Naturicare.in
FAQ | ডায়াবেটিস
Q1. রক্তে সুগার বেড়ে গেলে কী হয়?
Ans – ডায়াবেটিস চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য হলো ব্লাড সুগারের মাত্রা যতটুকু সম্ভব স্বাভাবিক মাত্রার কাছাকাছি রাখা। তবে সাবধানতা অবলম্বন করার পরেও ডায়াবেটিস রোগীদের কোনো না কোনো পর্যায়ে হাইপারগ্লাইসেমিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হাইপারগ্লাইসেমিয়া নির্ণয় করে এর চিকিৎসা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসা না নিলে হাইপারগ্লাইসেমিয়া থেকে বিভিন্ন জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হতে পারে।
Q2. মিষ্টি খেলেই কি সুগার হয়?
Ans – শুধুমাত্র চিনি বা মিষ্টি খেলেই সুগার হবে তা নয়। মানসিক চাপেও সুগার মাত্রা বাড়ে।
Q3. একটি সুগারের রোগীর নিয়মিত কতক্ষণ হাঁটা উচিত?
Ans – একজন সুগারের রোগীর নিয়মিত ২০-৩০ মিনিট হাঁটা উচিত।
Q4. মেথি কি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে?
Ans – মেথি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অসাধারণ কাজ করে।
Q5. কতটা পরিমাণ মেথি খাওয়া ভালো খাওয়া ভালো?
Ans – সুগারের লেভেলের উপর নির্ভর করে একজন সুগারের রোগীদের কতটা পরিমাণ মেথি খেতে পারবে। সাধারণত ৩ থেকে ৫ গ্রাম মেথি খাওয়া কথা বলা হয়।